আসাদুজ্জামান খাইরুল- বিশেষ প্রতিনিধি:
করোনা পরিস্থিতিতে সবধরনের খেটে খাওয়া মানুষদের জীবনযাপন হয়ে উঠেছে একটু কঠিন তবে এই কঠিন এর ভিতরে আরও কঠিন হয়ে উঠেছে যারা মাটি কেটে অথবা ইট বালু টেনে জীবন যাপন করেন।
এসকল মাটি কেটে খাওয়া মানুষরা যেখানে থাকেন অথবা যে এলাকাতে কর্ম করে খেতেন সেখানে এখন আর কাজ না পেয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে হেঁটে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কাজের সন্ধানে।
শফিক মোল্লা মাটি কেটে তার জীবিকা নির্বাহ করেন বহুদিন ধরে। সাভারের হেমায়েতপুরে থাকেন, তার একটি গ্রুপ আছে মাটি কাটার,
যে গ্রুপে সদস্য সংখ্যা ১২ থেকে ১৫ জন। সকাল হলে মাটি কাটার জন্য অথবা এই সংশ্লিষ্ট কাজ করার জন্য বের হয়ে আসে হেমায়েতপুর স্ট্যান্ডে।
যেখানে ভোরবেলায় পসরা সাজিয়ে বসে মানুষ কেনাবেচার। মানে রোজ হিসেবে এখান থেকেই মহাজনরা দামদর ঠিক করে তাদের নিয়ে যায় কাজের জন্য। সারাদিনে কাজ পেলে সেই কাজ করে চলে তাদের সংসার। করোণা পরিস্থিতিতে এমনিতেই কাজের অনেক অভাব, তার উপরে লকডাউন পড়ায় এখন তারা দিশেহারা।
সাভারের হেমায়েতপুর থেকে মানিকগঞ্জের সিংগাইর প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ তাদেরকে দেখা যায় হেঁটে পাড়ি দিতে কাজের সন্ধানে।
জানতে চাইলে শফিক মোল্লা বলেন এইডা আমগোর লকডাউন এর পর থাইকা নিত্য দিনের কর্ম। লকডাউনের চার দিন যাইতাছে হেমায়েতপুরের আশেপাশে কোন কাম কাইজ পাইনা, অহন চার দিন যাবত হাইটা সিংগাইর যাই কামের লাইগা। একদিন কাম পাইছি তাও আধগান বেইল পর্যন্ত। হের পরেরত্তন এই পর্যন্ত কোন কাম পাই নাই। আইজকা সকালেরত্তন বইয়া আছি, এহন আবার নামছে বৃষ্টি, কামতো পামু না তাই যাইতাছিগা।
হেঁটে আসার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলেন অটোরিকশা এত সহজে পাওন যায়না আবার যাও পাই মেলা দাম চায়, কেমনে যামু.? পুরা রাস্তা ও লইয়া যায়না, মাঝখানে আইন্না ছাইড়া দেয়। বাকি অর্ধেক আবার হাইট্টা যাওন লাগে, হেল্লোইগা হাইট্টা হাইট্টা যাই।
করণা পরিস্থিতিতে তাদেরকে প্রশাসন কোন ঝামেলা না করলেও চলাফেরা নিষেধাজ্ঞা, কাজের সীমাবদ্ধতায় লকডাউনের সময়টিতে দিশেহারা অবস্থা এই মাটি কেটে খাওয়া মানুষগুলোর।
আবদুল বারেক, আব্দুর রহমান আরো তিন চার জন ট্রাকের বালু কেটে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেয়ার কাজ করেন, হেমায়েতপুর থেকে সিংগাইর যাওয়ার পথে সাভারের তেঁতুলঝোড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এর কাছে বালু কেটে মাথায় করে টানতে দেখা যায় তাদের। কাছে গিয়ে কাজের অবস্থা জানতে চাইলে তারা জানান, বাহে তিন দিন পরে আজকে কাম পাইছি তাও ৩০০ টাকা রোজ কইরা পামু। কাম আর কই.? মানুষ এহন টানে না। কাম কাজ থাকলে তো মানুষ টানবো।
তাহলে সংসার কিভাবে চলে? জানতে চাইলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে চোখের কোনে জমানো অশ্রুর বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে, আল্লায় চালায় বলে তার কথার সমাপ্তি করেন।
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুর রহমান বলেন আমাগো কেউ দেহেনা, আমরা আইছি বাইরের থেইকা, নওগাঁয় বাড়ি আমগো আমগোরে কে দেখব ভাই। আমাগো দেখার কেউ নাই। তিনদিন পরে কাম পাইলাম তাও ১০ মাইল হাইটে আইসে এহন ৩০০ টাহা পামু। জানিনা কাইল কাম পামু কি পামুনা। এখন খালি কামের আশায় হাইট্টা হাইট্টা আমাগো দিন যায়।